প্রকাশনা সংস্থা : অনুপম প্রকাশনী।
মূল্য : ৬০০ টাকা।
প্রাপ্তিস্থান : অনুপম প্রকাশনী, পড়ুয়া এবং পড়ুয়া অনলাইনে।
জহির রায়হানের পরিচয় শুধু এদেশের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেই নয়, আমাদের কথাসাহিত্যেরও তিনি একজন অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব। আপাদমস্তক শিল্পী হিসেবে যা বোঝায় তিনি ছিলেন তাই। সর্বক্ষণ সৃষ্টির প্রেরণায় অস্থির এই মানুষটি চলচ্চিত্র এবং সাহিত্য এই দুই অঙ্গনেই ছিলেন। সমানভাবে সক্রিয়। আর দুই ক্ষেত্রেই তিনি তার প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেণ। ছিলেন প্রবল্ভাবে দায়বদ্ধ একজন মানুষও। আমাদের ভাষাআন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সংগ্রামী অভিযাত্রার প্রতিটি পর্যায়ে তিনি কেবল আলো হাতে জাতিকে পথই দেখাননি, ইতিহাসের বাঁকগুলো বাঙময় হয়ে উঠেছে তার রচনায়।
স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের অব্যবহতির পর তার বিয়োগান্তক অন্তর্ধানের ঘটনাটি জাতিকে কেবল হতবাক ও ম্যূহমানই করেনি, যেমন আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প তেমনি কথাসাহিত্যকেও অনেকখানি রিক্ত করে দিয়ে গেছেন। তারপরও মাত্র ৩৭ বছরের পরমায়ু নিয়ে চলচ্চিত্র ও সাহিত্য উভয় ক্ষেত্রে তিনি যে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন তা ইতিহাসে বিরল। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো : কাঁজল, কাঁচের দেয়াল, বেহুলা, জীবন থেকে নেয়া, আনোয়ারা, সঙ্গম এবং বাহানা। “জীবন থেকে নেয়া“ ছবিতে প্রতীকী কাহিনীর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের স্বৈরাচারী শাসনকে চিত্রিত করা হয় এবং জনগণকে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে উদ্বুদ্ধ করা হয়। তিনি “লেট দেয়ার বি লাইট“ নামে একটি ইংরেজি চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় তিনি তা শেষ করতে পারেন নি। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চের পর তিনি কলকাতায় যান। সেখান থেকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার গণহত্যার চিত্র সম্বলিত “স্টপ জেনোসাইড“ নির্মাণ করেন। ছবিটি পৃথিবী জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। জহির রায়হানের উর্দু ছবি “সঙ্গম“ ছিল পাকিস্তানের প্রথম রঙ্গীন ছবি। তাঁর অপর উর্দু ছবি “বাহানা“ ছিল সিনেমাস্কোপ। তিনি “কাঁচের দেয়াল“ ছবির জন্য প্রচুর পুরস্কার লাভ করেন।
যদিও বাস্তব কারণেই চলচ্চিত্রকার পরিচয়ের আড়ালে কথাসাহিত্যিক হিসেবে তাঁর অবদান হয়তো বা কিছুটা ঢাকাই পড়ে গেছে। যার ফলে নতুন প্রজন্মের অনেকেই এখনো পর্যন্ত জহির রায়হান যে চলচ্চিত্রকারে বাইরেও একজন কথাসাহিত্যিকও সেটি জানে না অনেকেই। জহির রায়হানের লেখালেখির শুরু তার ছাত্রজীবনেই। ১৩৬২ বঙ্গাব্দে তাঁর প্রথম গল্পসংগ্রহ সূর্যগ্রহণ প্রকাশিত হয়। তাঁর লিখিত অন্যান্য বইগুলি হচ্ছে শেষ বিকেলের মেয়ে, হাজার বছর ধরে, আরেক ফাল্গুন, বরফ গলা নদী এবং আর কত দিন। তিনি ১৯৭০ সালে প্রকাশিত ইংরেজি পত্রিকা “দ্য উইকলি এক্সপ্রেস“ প্রকাশের উদ্যোক্তাদের অন্যতম। এছাড়াও তিনি বেশ কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকার সাথেও যুক্ত ছিলেন। তার লেখা “হাজার বছর ধরে“ উপন্যাসের জন্য তিনি আদমজী পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭২ সালে তাঁকে বাংলা একাডেমী পুরস্কার প্রদান করা হয়।
আর তাই নতুন প্রজন্মকে জহির রায়হানের রচনাগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে তাঁর সকল রচনাগুলোকে একত্রিত করে “জহির রায়হান রচনাসমগ্র“ প্রকাশ করেছে অনুপম প্রকাশনী। বইটির দাম পড়বে ৬০০ টাকা। বইটি পাওয়া যাবে অনুপম প্রকাশনী, পড়ুয়া এবং পড়ুয়া অনলাইনে।