আজ কথাসাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ আর্নেস্ট হেমিংওয়ের শুভ জন্মদিন
দেবাশীষ বিশারদ
আমেরিকার শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের জন্ম ১৮৯৯খ্রিস্টাব্দের ২১ জুলাই ইলিনরের ওক পার্কে। সেখানে বাবা ছিলেন ডাক্তার। থাকতেন মিচিগান শহরের একপ্রান্তে। দুই ভাই চার বোনের বিরাট পরিবার, কিন্তু হেমিংওয়ের ঘরে মনটেকেনি। ১৫ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। ফলে লেখাপড়া তেমন একটা এগোয়নি। হাইস্কুল পেরোতেই চাকরি নেন ‘কানসাস সিটি স্টারে’। এরপর যুদ্ধো চলাকালে স্বেচ্ছায় ইউরোপে এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের কাজ করতে গিয়ে ইটালী সীমান্তে আহত হন। বীরত্বের প্রতীক হিসেবে একটা রুপার পদকও পেয়েছিলেন তিনি। জীবনে নানা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন হেমিংওয়ে। দিনের পর দিন শিকার করতে গিয়ে জঙ্গলে কাটিয়েছিলেন। জেলেদের নৌকা নিয়ে সাগরে গিয়েছেন মাছ ধরতে । এসবের মধ্যে যুদ্ধকালীন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা যেমন একজন অস্ট্রিয়ান সৈনিক মুখ থুবড়ে পড়ে আছে পকেট ওল্টানো অবস্থায়। আশেপাশে আরো মৃতদেহ । চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পোস্টকার্ড, চিঠি,নানারকম কাগজের টুকরা। গ্রীকরা যখন সেওে চলে যায় তখন তাদেও সঙ্গী মালবাহী পশুগুলোকে ডুবিয়ে দিয়ে যাওয়ার দৃশ্য তাঁর মানস জগতে চিরস্থায়ী হয়ে গিয়েছিল।এ কারণে ‘টরেন্টো স্টারে’ সংবাদদাতা হিসেবে লেখালেখিতে এবং পরবর্তী সময়ে গল্প উপন্যাসে মৃত্যুর প্রাধান্য এবং যে গেরিলা, সৈনিক,শিকারী এবং বুলফাইটারদের সাক্ষাৎ মেলে তারা আর কেউ নয় হেমিংওয়েরই আত্মস্থিত সত্তা।
আর্নেস্ট হেমিংওয়ে মার্কিন সাহিত্যেও অন্যতম পুরোধা। পঞ্চাশের দশকে আমাদের সাহিত্যাঙ্গনের আড্ডায় একটি বহুল ঊচ্চারতি নাম। বিশেষ করে ১৯৫৪ সালের নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এপিকধর্মী উপন্যাসিকা জন্যে। তিনি যে কবিতাও লিখেছেন তা আমরা জেনেছি পরবর্তী সময়ে। তাঁর গদ্যের এক সম্মোহনী ক্ষমতা যা রচনা করা কবিতা ছাড়া সম্ভবনয় সম্ভবত। ভিন্ন গদ্যের রূপকার তিনি।
তাঁর সৃষ্ট সাহিত্য যেমন আকর্ষনীয় তেমনি তাঁর ঘটনাবহুল জীবনও কম চিত্তাকর্ষক নয়। তাই কোনো কোনো সাহিত্য সমলোচকদের কাছে তাঁর ব্যক্তিজীবন প্রধান হয়ে উঠেছে।
’- এর প্রকাশের পর পরই। কিন্তু তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই একটি গল্পের সংকলন প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালে।
আর্নেস্ট হেমিংওয়ের রচনায় খুঁজে পাওয়া যায় রচনার শৈলীর অভিনবত্ব। নোবেল কমিটিও স্বীকার করেছেন জোরলো শিল্পনৈপুন্য ও আধুনিক সাহিত্যকলার উপর তাঁর ব্যাপক প্রভাবের জন্যেই তিনি আজ নোবেল পুরস্কৃত।
আমাদের সাহিত্যপিপাসা যে তাকে ছাড়া মেটে না তার প্রমান বাংলা ভাষায় অনূদিত তাঁর গ্রন্থাদি। তাঁর সাহিত্যকর্ম বিষয়ে উৎসাহী সমালোচকেরও অভাব ঘটেনি। আর্নেস্ট হেমিংওয়ের পুরো নাম আর্নেস্ট মিলার হেমিংওয়ে। তিরিশ বছর বয়সে তিনি নামের মধ্যপদ অর্থাৎ মিলার শব্দটি বর্জন করেন। বরেন্য এই সাহিত্যিকের জন্মবার্ষিকীতে আমরা তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি।
তিনি সংশয়, ব্যর্থতা ও হতাশাময় ভাঙনের ভিতর সুস্থ সরল জীবনের জয়গান করেছেন।
নোবেল বিজয়ী এ উপন্যাসিক ১৯৬১ সালের ২ জুলাই ৬২ বছর বয়সে নিজের হাতের বন্দুকে তাঁর জীবনাবসান ঘটে।